মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৩

ঘুমানো দরকার

আমারে যদি ঘুমাইতে হয়

তাইলে রাইত হউক

আমার পানে যদিও চোখ পিট পিটাও
ঘুম দিব আমি পূবে সোনালি বইলেই
ছোট ছোট দুখানি মেঘ মোর
তাও যদি ভেঙ্গে যায়
সদা ভাবি চোর
কখন জানি উইড়া আসে
লগে মোর মৃদু সহাস্যে
কথা অমৃত ভুজুং ভাজুং
তারপর দেখিব সদা ভয়ে
ভাগিয়া গিয়াছে মেঘ


তখন কী উপায়ে ফিরাইব
মোর সদা ভয়ে মেঘ?


একদা যা ছিল সম্বল
এই ধরি
আর্ট কালচার লোটা কম্বল
সব লইয়া ভেগেছে
এক সোনার তরী
এখন তো হায়, কিছু নাই
শুধু রইয়া গিয়াছি
মোরা দুখানা মেঘ
তাও যদি ভাগিয়া যাই
কেমনে ফিরিয়া পাবে


তাই তো ফিরিয়া ভয়
যদি রাইত বকা কয়
যদি মোরে ঘুমাইতে হয়

কিন্তু

আমি ঘুমাবো না
সারাদিন চরিয়া ফেরিব
দুইখানা মেঘ সাথে লইয়া
তাহারা হাটিবে-দৌড়াইবে না
যদি ঘামিয়া বর্ষণ করে
বুকে জড়াইয়া ঘুরিব আমি
ঘমাইব না
আর্ট কালচার বিনে ঘুম কিসে তে?
তাই হাটি আমি সূর্যের সহিত
ইহাতেই রাত ফাকি
ঘুম তো নাই যে,
নাকি?

রাত নাই, ঘুম নাই
বনতলে দোল নাই
দ্বার নাই, ঘর নাই
আছে শুধুই দুখানি
শুভ্র রঙা মেঘ সাদা।
/লায়েছ
কাফরুল, ঢাকা
২০১২

২০১৩ht and day

শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০

ছুটির দাবি নিয়ে এসেছি



 

তখন আমি আমার সন্তানকে বলেছিলাম

কাঁধ ভর্তি কাগজের দঙ্গলমাখা বই নয়

থান থান ইট নিয়ে যেতে

আর যখনই শ্রেণীতে দাঁড়িয়ে সে

শিক্ষক বলবেন

"কে কে বাড়ি থেকে মরে আসো নাই?"

তখনই ইট তাঁর কন্ঠের বরাবর

ছুঁড়ে দিয়ে বলবে

"আমি, আমি সে জনাব

আমিই মরে আসি নাই"

আমার বর্ষার ছুটির দাবি নিয়ে এসেছি

আমি দাগ টানা ঘরে

কবর লিখিনি

আমিই এসেছি জালি-সুন্ধির বেত

হাওয়ায় উড়াতে


মোহাইমিন লায়েছ

কাফরুল, ২০১১

বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯

না নিবিতে আশ্বিনের কমল-দীপালি

"না নিবিতে আশ্বিনের কমল-দীপালি,
 তুমি শুনেছিলে বন্ধু পাতা-ঝরা গান"
/কাজী নজরুল ইসলাম


যখন রাত্রীকালীন নিস্ততব্ধতা চুপ হয়ে আঁকড়ে বসে
কিই বা করার থাকে আমাদের
আমরা বসে থাকি
ভাবি
শুধুই কি আমাদের জেঁকে বসে
নাকি
অন্যদূরে
আরো অনেকটা দূরে
থাকে যারা তাদেরকেও

ঐ যে দূরে যে বাড়ির বাতি নিভে গেছে
হয়ত বা কেউ নাই
বা
কেউ শুয়ে আছে
মশারির পেটে
আশ্বিনী বাতাস জলের মতন
ফুলে ওঠে
প্রাচীন এই কাঠামো জুড়ে
আরো একবার

যারা শুয়ে আছে
মশারীর পেটে
তারাও কি জেগে আছে
দেখছে কি মশারি পাল তুলে
ছুঁয়ে ফেলে উপকূল
শুষে নেয় জল
বয়ে আনে মেঘমালা
এসব কি তারাও দেখছে

আমরা তো দেখ
অনেকগুলো একাকী মানুষ শুয়ে আছি
মাছের আড়তে
সারি সারি
একের পরে এক
সেখানে
পাশাপাশি শুয়ে থাকে তারা
একা একা
ঠিক যেন আমরা
শুয়ে আছি
পরতে পরতে মেঘ জমে যাচ্ছে
আমাদের পায়ের পাতায়

এই যে তারা কি আমরা
এই ভবে পার করে যাচ্ছি
রাত্রি
পায়ে মেঘ নিয়ে
জানালা রেখেছি খুলে
থেকেছি তাকিয়ে
একে অপরের জানালার পরে
উঁকি দিয়ে তো চেয়েছি দেখতে
কত শত অজুহাতে
মুছে দিতে নানা কারণে চেয়েছি
সকল রাত্রিকালীন নিস্তব্ধতা
কিন্তু পারব না কেউ
রাত্রিকে চাইবে কে জাগাতে
এমনই অবসন্নতা আমাদের

পার হয়ে যাচ্ছে
দুপুরের মতো দীর্ঘ রাত্রি
রাতে চুপচাপ থাকা ছাড়া
কিছু যেন করবার নেই

অনেক মানুষ পাশাপাশি
একা একা দাঁড়িয়ে আমরা
এভাবে থাকব
পাশ ফিরে শুব না তো
একে অপরের দিকে
কেন বা তাকাব
যদি ভালবেসে ফেলা লাগে
অনেকগুলো আমরা
অনেকগুলো তোমরা
পাশাপাশি কত
একা একা
বৃষ্টিতে ঠায় দাঁড়িয়ে
বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে
কিন্তু
ভিজছি তো না আমরা

সামনে দিয়ে হেঁটে যায় দেখ
সারি সারি বৃক্ষ
গমনকৃত বৃক্ষ
আশ্বিনী শেফালি তারা
বুক ভরে নেয়া
ছাতিম ঘ্রাণ
বিছানো পথে
চুলে শিশির মাখায়ে
ডাকছে একে অপররে
ভালবেসে মরে যাচ্ছে

আমরা মরছি না

ঝিরঝির বৃষ্টি রাতে
ভরা জোছনাতে
নরম বাতাস সব
করেছে নিমীল আয়োজন
কেউ মরছি না
কেউ মরছে না
একা একা
কেউ কি মরিতে পারে
তবু দাঁড়িয়ে থাকব
তারা
আমরা
এই একাকী নির্জন নিমগ্ন রাত্রিরে
মেঘ মেদুর করুণাধারায়
একবিন্দু সিক্ত না হয়ে
শুয়ে থাকব
মাছের আড়তে
খুব পাশাপাশি
একা একা



মোহাইমিন লায়েছ
অক্টোবর, ২০১৯
ইব্রাহিমপুর, ঢাকা

 


শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৯

তুমি ছোট্ট বিড়াল

কে তুমি ছোট্ট বিড়াল ছানা
এমন অমর্যাদার দুনিয়ায়
অচল স্থবির সব
টাকা ছাড়া পাতাও নড়ে না
এরই মাঝে
তোমাকে নিয়ে ছুটছি
লাল নীল বাতি
জ্বলছে নিভছে
আমি কাদছি
আমরা ছুটছি
কী আজব দেখ
এত ছুটে যাচ্ছি
কত কৌশলে
কত কিছু করে
কিন্তু সেই একই জায়গায়
ঠায় রয়ে গেছি
ছোট্ট বিড়াল তুমি
কোলে নিয়ে তোমাকে
এত এত এত এত দৌড়ে
সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি

১২ জানুয়ারী. ২০১৮
মিরপুর ২, ঢাকা

সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৬

শুভরাত্রি, সুন্দর স্বপ্ন দেখেন

১.
আমি ঘুমাব না স্বামী
নয়ন আড়ালে থাকিব না
যে কাজল রেখা টানিয়াছ তুমি
অশ্রুতে কাঁদিছে দেখ মেঘ
সে গাঢ় কাজলের রাত্রিতে
তুমি প্রিয়া মোর বুকে ডুবে
শ্যাম সুন্দর চম্পা মাধবি বেশে
রক্তজবা রাঙা পায়

আমি ঘুমাবো না স্বামী
মোর ঘরে আধো ঘুমের স্বপনে
এসো মধু পিঙ্গল ঠোঁটে নেই তোমায়
রহিব আর কত এ শূণ্য দেশে প্রিয়া
গোপনে এসো গো বিদেশিনী
এই কাঙালের দেশে বধূ হয়ে
শেষ করো এই রাত্রি মম

আমি ঘুমাবো না স্বামী
করুণ কান পাতিয়া শ্বাস গুণি
এসো গো সঙ্গীত তুমি মৌসুমী বাতাস
আমার দেহে আলতা পায়ে এসো নৃত্যরাজ
পথ চাহিয়া কী পেলাম গো স্বামী
সকলের নিন্দা মুখেতে বুজিয়া
তোমারে খুঁজিয়া জ্বলি ফাগুন নিশিতে

২.
সকলে ঘুমায় প্রিয়া
আমি তবু ঘুমাবো না
যদি চলে আসো হতভাগিনীর কাছে
তোমারে বাতাস করিবার ফাঁকে
কে দেখিবে তোমারে গো স্বামী
কে বা মুছাইবে শাড়ির আঁচলে
পরাণের গহীনে যে ছবি আঁকিয়াছি
তাতে কে দোল ছড়াইবে

তোমার বাঁশিতে তোমারে বাঁধিব শ্যাম
নারীর বেদনা কে জানিতে পারে
পাখি তুমি বনমালীরে দেখিলে কইয়ো
খিল নাই কলঙ্কিনীর ঘরেতে
বাহু বাড়াইয়া অশ্রুতে আঁখি ছলছল
ভীরু বুকেতে কোহেলিকা কাপিছে টলমল।

এপ্রিল ২০১৬
ইব্রাহিমপুর, ঢাকা

সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫

এই খোলতা রাতে


আহা প্রাক্তন, এই খোলতা রাতের ঘ্রাণে
শিউলি তলায় আবার তো কুড়িয়ে পেলে
ঝিনুকের পেট খুলে বেরিয়ে এসে পড়ে
চন্দ্রালোকের পথ রেখায় বসে আমি
নজরে পড়তেই তো আবার দীর্ঘকাল
রেখা সব মুছে দিয়ে দিয়ে চলে যায়
বারবার জলে ভিজে তুমি শৈবাল এক
ছোট্ট মাছেদের পৃথিবীতে শীতকালীন জলের
ভিতর রুদ্ধশ্বাস চিকীর্ষা।

ওগো প্রাক্তন, এই রসা রজনীর রোহিনী মোরা
মায়াকাননের বাসনা বর্ণ স্পর্শ চন্দিনী
ফুলেল ঘ্রাণ বাষ্প পাখিদের ন্যায়
তবু বারবার শিকারীদের কাঁটা দেখি
বুঝি মোদের বুকে প্রেম ফ্যাকাসে
রঙের নিরল আস্তরণ খসে পড়ে।


আহা প্রাক্তন, আমি বলছি না
যে মালা ভালবেসে দিয়েছ তাকে
সে মালার ফুল তুমি সুধাকর
গাঁথ নি, পুরষ্ট মন্থিত ঠোঁটে মধু চাখ নি
শুধু বলেছি যে ফুলে মালা গাঁথ
নির্নিমিখ আমাকেও গেঁথে ফেলো
মোর বুক এ ফোঁড়-ও ফোঁড়
করে পৃথিবী ঘিরে থাকা নক্ষত্রদের দিকে
নরম ধবল পালক রাশি উড়িয়ে
যখন একটিতে বসে ভাসতে ভাসতে
বাকিগুলোর নিরুপম পতন দেখ
তখন কি সেই নিরুপমতার
একটিতে এমন খোলতা রাতে
মন্থর অবিরাম বিপন্নতার পাশ ধরে
এই যে আমাকেও দেখ না?

না দেখিলে!

আমি বরং জাগরী এই খোলতা রাতে
খোলা চুলে আদুল বাতাসের সাথেই
কথা কই বৃহৎ শুভ্র তারাকে ভালবেসে
চোখ বুজে ছুঁয়ে দেই
সরস নরম ফুলের বৃন্তকে।



৩০. ০৮. ১৫
ইব্রাহিমপুর, ঢাকা

শনিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫

ওয়ালস্ট্রিট করটির নিমিত্তে আক্ষেপ

এর চেয়ে করটি যদি হত ওয়ালষ্ট্রিটের প্রেতাত্নিক দেয়াল
বাতাসটি ঠিকই ফোঁকর গলে বেরিয়ে যেত অসীম আকাশে।
আমিও মিশে যেতাম তীব্র উদ্দামে রঙ্গিন স্যান্ডউইচে
আমিও হয়তো বা নখের আঁচড়ে বিদ্ধ হয়ে রাতের চাঁদকে
অসম্ভব ভেবে লাল-নীল আলোর নিচে থাকতাম,
তখন আমিও লিপগ্লসে চুমো খেয়ে পুড়িয়ে ফেলতাম
ফুলের বাগান।
আর তুমিও লিপ লাইনার দিয়ে সীমারেখা টেনে দিতে আমার প্রেমের।

কিন্ত।
এ কি হল? বল ত।

এক গুমোটে মৌসুমি বাতাসকে কৃতজ্ঞতার সত্যাপন পাঠিয়েছিলাম।
বলেছিলাম, “লাল হবে রঙ করটির দেয়ালের।”
সেও জবাব দেয় জোনাকি মারফত।
সেই থেকে লিপগ্লস ডাস্টবিন, উদর নিঙড়িয়ে তুলে আনে
সভ্যতার আবর্জনা।
করটির দেয়ালে আছড়ে পড়ে লাল স্রোত।
আর করটিতে আচমকা আটকে পড়া উদমো বাতাস
জ্বালিয়ে রাখে আমার সফেন ভাতের লাল চুলো
                     দ্রিম দ্রিম শব্দে।



১১জুন ২০১১
কাফরুল, ঢাকা