বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯

না নিবিতে আশ্বিনের কমল-দীপালি

"না নিবিতে আশ্বিনের কমল-দীপালি,
 তুমি শুনেছিলে বন্ধু পাতা-ঝরা গান"
/কাজী নজরুল ইসলাম


যখন রাত্রীকালীন নিস্ততব্ধতা চুপ হয়ে আঁকড়ে বসে
কিই বা করার থাকে আমাদের
আমরা বসে থাকি
ভাবি
শুধুই কি আমাদের জেঁকে বসে
নাকি
অন্যদূরে
আরো অনেকটা দূরে
থাকে যারা তাদেরকেও

ঐ যে দূরে যে বাড়ির বাতি নিভে গেছে
হয়ত বা কেউ নাই
বা
কেউ শুয়ে আছে
মশারির পেটে
আশ্বিনী বাতাস জলের মতন
ফুলে ওঠে
প্রাচীন এই কাঠামো জুড়ে
আরো একবার

যারা শুয়ে আছে
মশারীর পেটে
তারাও কি জেগে আছে
দেখছে কি মশারি পাল তুলে
ছুঁয়ে ফেলে উপকূল
শুষে নেয় জল
বয়ে আনে মেঘমালা
এসব কি তারাও দেখছে

আমরা তো দেখ
অনেকগুলো একাকী মানুষ শুয়ে আছি
মাছের আড়তে
সারি সারি
একের পরে এক
সেখানে
পাশাপাশি শুয়ে থাকে তারা
একা একা
ঠিক যেন আমরা
শুয়ে আছি
পরতে পরতে মেঘ জমে যাচ্ছে
আমাদের পায়ের পাতায়

এই যে তারা কি আমরা
এই ভবে পার করে যাচ্ছি
রাত্রি
পায়ে মেঘ নিয়ে
জানালা রেখেছি খুলে
থেকেছি তাকিয়ে
একে অপরের জানালার পরে
উঁকি দিয়ে তো চেয়েছি দেখতে
কত শত অজুহাতে
মুছে দিতে নানা কারণে চেয়েছি
সকল রাত্রিকালীন নিস্তব্ধতা
কিন্তু পারব না কেউ
রাত্রিকে চাইবে কে জাগাতে
এমনই অবসন্নতা আমাদের

পার হয়ে যাচ্ছে
দুপুরের মতো দীর্ঘ রাত্রি
রাতে চুপচাপ থাকা ছাড়া
কিছু যেন করবার নেই

অনেক মানুষ পাশাপাশি
একা একা দাঁড়িয়ে আমরা
এভাবে থাকব
পাশ ফিরে শুব না তো
একে অপরের দিকে
কেন বা তাকাব
যদি ভালবেসে ফেলা লাগে
অনেকগুলো আমরা
অনেকগুলো তোমরা
পাশাপাশি কত
একা একা
বৃষ্টিতে ঠায় দাঁড়িয়ে
বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে
কিন্তু
ভিজছি তো না আমরা

সামনে দিয়ে হেঁটে যায় দেখ
সারি সারি বৃক্ষ
গমনকৃত বৃক্ষ
আশ্বিনী শেফালি তারা
বুক ভরে নেয়া
ছাতিম ঘ্রাণ
বিছানো পথে
চুলে শিশির মাখায়ে
ডাকছে একে অপররে
ভালবেসে মরে যাচ্ছে

আমরা মরছি না

ঝিরঝির বৃষ্টি রাতে
ভরা জোছনাতে
নরম বাতাস সব
করেছে নিমীল আয়োজন
কেউ মরছি না
কেউ মরছে না
একা একা
কেউ কি মরিতে পারে
তবু দাঁড়িয়ে থাকব
তারা
আমরা
এই একাকী নির্জন নিমগ্ন রাত্রিরে
মেঘ মেদুর করুণাধারায়
একবিন্দু সিক্ত না হয়ে
শুয়ে থাকব
মাছের আড়তে
খুব পাশাপাশি
একা একা



মোহাইমিন লায়েছ
অক্টোবর, ২০১৯
ইব্রাহিমপুর, ঢাকা